নিজস্ব প্রতিবেদক:ঢাকার সাভার পৌর এলাকা এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে রাখার পর, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব, তার ভাই ফখরুল আলম সমর ও রাজীবের শ্যালক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেলের অনুসারী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল, সোহেল ওরফে ল্যাংড়া সোহেল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এখনো সশস্ত্র অবস্থায় এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়, পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, মার্কেট থেকে চাঁদা আদায়, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে চাঁদা আদায়,
মুরগির গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির কোটি টাকার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তারা এখনো মরিয়া।
ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেফতার হলে ফ্যাসিস্ট আমলে নির্যাতিত আওয়ামী বিরোধী নেতারাও তাদের ছাড়াতে তদবির করায় সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় বেকায়দায় পড়ছে পুলিশ। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী বিরোধী নেতাদের তদবিরে জুলাই আন্দোলনে হত্যাকারীদের ধরতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। অভিজ্ঞ সন্ত্রাসীদের দলে নিয়ে পূর্বের রাজত্বের হাত বদল হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার পৌর এলাকার বিরুলিয়া রোডে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ লাঠি সোটা নিয়ে মহড়া চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ওরফে ল্যাংড়া সোহেল।
মুরগি হেলাল ও লেংড়া সোহেলের নেতৃত্বে গত কয়েকদিন যাবত সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন মার্কেটের ফুটপাতের সামনে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে নীরব চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মার্কেটের সামনে বিরুলিয়া রোড বন্ধ করে দোকান বসানোর ঘটনায় যানজটের সৃষ্টি হলে তাদের বাধা দেয় মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে মার্কেটে ভাংচুর করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় এই সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সময় মার্কেট ইনচার্জসহ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় যুবলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল।
সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীবের চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনীর সদস্য যুবলীগ কর্মী হেলাল ওরফে মুরগি হেলালের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল ও সহযোগী ল্যাংড়া সোহেলের গ্রেপ্তারের দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজিবের প্রভাব বিস্তার করে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও পতিত সরকারের পতন হলে কাদের সহযোগিতায় এখনো সাম্রাজ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে এই সন্ত্রাসীরা, এ বিষয়েও তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়টি নজরে আনলে বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতারাও সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল ও ল্যাংড়া সোহেলের বিচরণে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
ঢাকা জেলা, সাভার উপজেলা ও সাভার পৌর বিএনপি’র দায়িত্বশীল তিন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ৫ই আগষ্ট নতুন করে দেশ স্বাধীন হলেও সন্ত্রাসীদের তাবেদারিতে মনে হচ্ছে সাভার পৌর এলাকা এখনো স্বাধীন হয়নি। মুরগি হেলাল ও লেংড়া সোহেল এলাকার চিহ্নিত যুবলীগের সন্ত্রাসী। তারা স্বৈরাচার পতনে ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে এই সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে সাভার পৌর এলাকায় ব্যবসায়ীদের নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এখনো সেই দিন দেখতে হলে আমাদের অর্জন কোথায়.?
ফ্যাসিস্ট আমলে হেলালের নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শরীফ জানান,
সাভারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের নির্দেশে অসংখ্য মানুষকে উলঙ্গ করে খুটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে অভিযুক্তরা। অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে চাঁদা আদায় ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে রামরাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। সরকার পতনের পর কিছুদিন পালিয়ে থাকলেও এই সন্ত্রাসীরা আবারো সাভার পৌর এলাকায় পূর্বের রামরাজত্ব কায়েম জারি রাখতে শুরু করেছে। তারা এতবড় সন্ত্রাসী যে, ভাড়ায় কাজ করে। ৩ এবং ৪ঠা আগষ্ট সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মিছিল কারীদের প্রকাশ্যে পিটিয়েছে হেলাল। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে সাভার থানাতেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তবে এই বাহিনীর বিচার ফ্যাসিস্ট আমলে করা সম্ভব হয়নি। তারা এলাকায় আবারো সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করছি, তাদের এখনই প্রতিহত করতে হবে।
সাভার পৌর শ্রমিক দলের এক নেতা জানান, মুরগী হেলাল ও ল্যাংড়া সোহেল চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা ছাত্র হত্যার একাধিক মামলার আসামী। তারা রাজীব বাহিনীর সদস্য ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষকে তারা জিম্মি করে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছিল। এখনো তারা এলাকায় অস্ত্র প্রদর্শন করে সন্ত্রাস কায়েম করতে চায়। কিন্তু তাদের আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে দেয়া হবে না। ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকদল তাদের প্রতিহত করবে। সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল, সোহেল ওরফে ল্যাংড়া সোহেল ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এখনো এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। গতকাল রাতে তারা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মহড়া চালিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মার্কেট গুলোতে ভাঙচুর করেছে। আমাদেরও তাদের প্রতিহত করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীরা শান্ত রয়েছে। তিনি প্রশাসনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ওই দুই সন্ত্রাসীর ভাণ্ডারে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে। দ্রুত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
এদিকে সাভার মডেল থানার সাবেক দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল ও সোহেল ওরফে লেংড়া সোহেল যুবলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত, এছাড়া অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে ভাড়ায় খাটতো। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের ধরে এনে একাধিকবার চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের উপর হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছিল এরা। পরবর্তীতে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট অপরাধ দমনে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলাও দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তাদের আওয়ামী লীগের নেতারা সেল্টার দিয়ে জেল থেকে বের করে নানা অপকর্মের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। ওই মামলাগুলোর কারণে বর্তমান প্রেক্ষাপটের অনুকম্পা পেতে পারে, তবে তাদের অপরাধ দমনে নজরদারির পাশাপাশি কঠোরভাবে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে তাহলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তারা বাইরে থাকলে নানা ধরনের অপরাধের কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, ‘তারা যেই হোক না কেন, যদি কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধী ধরতে পুলিশ এখন আরো সচেতন এবং এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছি, কোন সন্ত্রাসীর স্থান সাভার থানা এলাকায় হবে না।’