বিএনপি’র পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অনেকেই আজ মাঠ পর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:শোনার,বলার কিংবা লেখার দিক থেকে দলের শীর্ষ মহল থেকে মাঝে মাঝে আসা আবেগী বক্তব্যগুলো নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়—কিন্তু বাস্তব মাঠে দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যারা হাসিনা সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়েছে, মামলা-হামলা আর জুলুম-নির্যাতন সয়ে দলটিকে টিকিয়ে রেখেছে, সেই পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অনেকেই আজ মাঠ পর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

এর বিপরীতে, যারা নিরাপদ দূরত্বে থেকে বছরের পর বছর গা বাঁচিয়ে চলেছে, পর্দার আড়ালে ক্ষমতাসীনদের সাথে বোঝাপড়া করে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছে, তারা এখন সুবিধাজনক সময় আসতেই সামনে চলে এসে দলের ত্যাগী নেতাদের পাশ কাটিয়ে নিজেদের আস্থাভাজনদের দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অধিকাংশ জায়গায় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও হতাশা বিরাজ করছে।

এই বিশৃঙ্খলার পেছনে দায়ী হাইব্রিড, সুবিধাবাদী এক শ্রেণির নেতা—যারা দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না, কিন্তু হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে পদ-পদবী নিয়ে ত্যাগীদের ছাঁটাই করছেন। তাদের কারণে মাঠের কান্না, কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছায় না। যারা পৌঁছানোর কথা, তাদের অধিকাংশই পরীক্ষিত বা ত্যাগী নন। ফলত, মাঝে মাঝে কিছু আবেগী বক্তব্য শোনা গেলেও তা বাস্তবায়নের কোনো আলামত দেখা যায় না।

এই অবস্থা দীর্ঘদিন চললে বিএনপিতে সত্যিকারের ত্যাগীরা টিকে থাকতে পারবেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে রাজনীতি ছাড়বেন, ফলে পরীক্ষিত নেতৃত্ব তৈরি হবে না—যার কুফল প্রতিবার বিরোধী দলে থাকাকালে প্রকট হয়ে ওঠে।

গত ১৫ বছরে বিএনপি যে দুঃসময় পার করেছে, তা দলের ইতিহাসে বিরল। যারা এই সময়ও দলকে ধরে রেখেছেন, তাদের প্রতি অবহেলা হলে দলের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক চোরাবালিতে ডুবে যেতে যেতেও দলকে টিকিয়ে রেখেছে যেসব ত্যাগী সৈনিক, তারা যদি এবারও মূল্যায়ন না পান, তবে ভবিষ্যতে যখন পরিস্থিতি বদলাবে, তখন আর তাদের ডাকার মুখও থাকবে না।

রাজনীতি একদিনের খেলা নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সুসংগঠিত কাঠামো ও সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া দল টিকে থাকতে পারে না। বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ এখন আর কেবল আওয়ামী লীগ নয়, জামায়াত নয়, এনসিপি নয়—নিজ দলেই সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এখন সময় এসেছে নেতা-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে দলকে কর্মী-কেন্দ্রিক, ডাটা-ভিত্তিক, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, তরুন ও মেধাসম্পন্ন নেতৃত্বে পুনর্গঠনের।

প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী ডাটাবেজ—যেখানে প্রতিটি কর্মীর রাজনৈতিক প্রোফাইল, ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিসংখ্যান, মামলা, নির্যাতনের ইতিহাস ও সাংগঠনিক অবদান নিবন্ধ থাকবে। যেন ডাটাবেজ বিশ্লেষণ করেই যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করা যায়, ‘কে কোথায় ছিল’ তা স্মৃতির উপর নির্ভর না করে কিংবা কোন নেতার কথার উপর ভিত্তি না করে, বাস্তবতাকে ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা যায়।

অন্যথায়, ধানের খেতে বেড়া ভেঙে ছাগল ঢুকে পড়বে, আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন—দুঃসময়ে আর কেউ মাঠে নামবে না।