বিশেষ প্রতিনিধি:ঢাকার অদূরে গাজীপুরের মাওনায় স্বর্ণের দোকান থেকে ৩৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ উঠেছে। মালিক ও কর্মচারিদের মারধর করা হয়েছে। এমনকি সাইনবোর্ডও বদলে ফেলা হয়েছে। রিতা জুয়েলার্স-এর সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সঙ্গীতা জুয়েলার্সের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। মব তৈরি করে সন্ত্রাসীদের নিয়ে জনৈক সুব্রত চন্দ্র দাস এ কান্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় আহাজারি করে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত রিতা জুয়েলার্সের মালিক মাওনার পরিচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ দাস। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শ্রীপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেও পুলিশি সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন গৌরাঙ্গ দাস।
গৌরাঙ্গ দাস জানান, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন। মাওনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় মসজিদের গলিতে তার রিতা জুয়েলার্সের দোকান। হেলাল উদ্দিনের একটি একতলা ঘর ভাড়া নিয়া তিনি এই জুয়েলার্সটি চালাচ্ছিলেন। তার ব্যবসায়ী সাফল্যে ইর্ষান্বিত হয়ে আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুব্রত চন্দ্র দাস ও কবির হােসেন মিলে এমন কান্ড ঘটায়। এর আগে দোকানটির পজেশন ছেড়ে দেয়ার জন্যও সুব্রত বারবার হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। সুব্রতর দাবি এই দোকানটি তার কেনা। দোকান মালিক হেলাল উদ্দিনকে এ ঘটনা জানাইলে তিনি গৌরাঙ্গ দাসকে তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে বলেন।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর মডেল থানায় গৌরাঙ্গ দাস দায়েরকৃত অভিযোগে জানান, গত ১৭ জুন বেলা দেড়টার দিকে সুব্রত চন্দ্র দাস, কবির হোসেন, টিপু মিয়াসহ আরও ৩০/৩৫ জন রিতা জুয়েলার্সে হামলা চালায়। এসময় তাদের হাতে ছিল দেশীয় অস্ত্র। অস্ত্রের মুখে দোকানের সবাইকে জিম্মি করে। চালায় লুটপাট। তাদের হামলায় গৌরাঙ্গ দাস, তার ছোট ভাই চন্দন দাস, বড় ভাই বাবুল দাস, দোকানের ম্যানেজার জয় সাহা আহত হন। মুখ চেনা হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায় ৩৬ ভরি স্বর্ণালংকার (যার মূল্য অন্তত ৬০ লাখ টাকা। গৌরাঙ্গ দাস, দোকানের কর্মচারী ও আহত লোকজনের ডাকচিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে সুব্রত দাস শ্রীপুর থানার এস আই মনোয়ার হোসেন এর সহযোগিতায় উক্ত দোকানের ভিতর থেকে গৌরাঙ্গ দাসকে বের করে সব মালামালসহ দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। দোকানের মালিকানা দাবিকারী দুই পক্ষকে থানায় যেতে বলে। গৌরাঙ্গ দাসকে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলে চলে যায়।
এ ঘটনার পরে ঐদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সুব্রত দাসের আরেক সহযোগী পায়েল সরকার ৫/৬ জন লোক নিয়ে এসে রিতা জুয়েলার্সের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে সঙ্গীতা জুয়েলার্সের ব্যানার টানিয়ে দিয়ে যায়। এই অবস্থায় গৌরাঙ্গ দাস শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে শ্রীপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কুদ্দুছ পরের দিন ১৮/৬/২৫ সন্ধ্যায় তদন্ত করে বাদী গৌরাঙ্গ দাসকে কিছুই না বলে চলে যায়। উক্ত ঘটনার পর থেকে রিতা জুয়েলার্স এখনও পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
তারা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস কে বিভিন্ন সময় হয়রানি ও নাজেহাল করার জন্য চেষ্টা করে। সবকিছু সহ্য করে আসছিল গৌরাঙ্গ দাস। মাওনা বাজারের স্থানীয়রা জানায়, রিতা জুয়েলার্সে মালিক গৌরাঙ্গ দাস একজন ভদ্রলোক। সবার সাথে সুসম্পর্কের কারণে তার দোকান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এটা সহ্য হচ্ছিল না বিবাদীদের। আর তাই মব তৈরি করে এ ঘটনা ঘটায়।
দোকানের মালিকানা নিয়া হেলাল উদ্দিন ও সুব্রত দাসের মধ্যে গাজীপুর জজকোর্টে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এর সূত্র ধরে সুব্রত দাস দোকানের ভাড়াটিয়া গৌরাঙ্গ দাস ও তার ছোট ভাই চন্দন দাসকেও শ্রীপুর থানা ও গাজীপুর জজকোর্টে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়েছে।
পুলিশের অসহযোগিতার কারণে গৌরাঙ্গ দাস দোকানে যেতে পারছেন না। হামলাকারীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়ায় যেতে পারছেন না নিজ বাসায়। তিনি একরকম পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লুটপাটে পুঁজিপাট্টাও শেষ। তার সংসারে চলছে নীরব কান্না। এ অবস্থায় পাশে প্রশাসনও যদি না দাঁড়ায়, তাহলে অসহায় গৌরাঙ্গ দাসরা যাবে কোথায়?
এদিকে এ ব্যাপারে আলাপকালে শ্রীপুর থানার এস আই মনোয়ার হোসেন জানান, জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯-এ রিতা জুয়েলার্সের গৌরাঙ্গ দাসের ফোন পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। থানায় ডেকে দুই পক্ষকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন।এ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এস আই কুদ্দুছ জানান, এ ঘটনায় দুই পক্ষকেই নিজেদের সমাধানে আসতে বলেছি। তারা দুই পক্ষই একমত হয়েছে।